Today Date And Day

Breaking News:
Loading...

জাতিসংঘকে ভুল তথ্য দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার! হেরফের হয়েছে রিপোর্ট?


নিজস্ব প্রতিনিধি, ঢাকা : 

জুলাই-আগস্ট ঘটনায় মানবাধিকার লঙ্ঘন সংক্রান্ত বিষয়ের তদন্তে ইউনুস সরকার জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ প্রার্থনা করেছিল। এক্ষেত্রে রিপোর্ট প্রকাশ হতে হাতে গোনা কয়েক দিনই বাকি, এরই মাঝে অভিযোগ উঠছে ইউনুস সরকার জাতিসংঘকে অনেক ক্ষেত্রে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়েছে। 

এক্ষেত্রে জাতিসংঘের তরফ থেকে পূর্বে বলা হয়েছিল জানুয়ারির মাঝামাঝি নাগাদ প্রতিবেদন বা রিপোর্ট পেশ করা হবে। কিন্তু এক্ষেত্রে জাতিসংঘ একমাস পিছিয়ে গেছে ইউনুস সরকারের অসহযোগিতার কারণে। গত ২৪ অক্টোবর জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশন থেকে একটি চিঠি দেওয়া হয় অন্তর্বর্তী সরকারকে। এক্ষেত্রে তদন্তের স্বার্থে জাতিসংঘ বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত চেয়েছিল। সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হলেও অন্তর্বর্তী সরকার জাতিসংঘকে নির্দিষ্ট সময়ে সব তথ্য পাঠায়নি। 

প্রথমবার ১২ই সেপ্টেম্বর তথ্য অনুসন্ধান দল সরকারকে ৩০শে সেপ্টেম্বরের মধ্যে তথ্য দিতে বলে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার তা প্রদানের ব্যর্থ হয়, এরপর পুনরায় জাতিসংঘের তরফ থেকে ৪ঠা নভেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। সেবারেও ইউনুস সরকার জাতিসংঘকে তথ্য দিতে পারেনি। এ প্রসঙ্গে জাতিসংঘের তথ্য অনুসন্ধানে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, ঢাকার পক্ষ থেকে তদন্তের স্বার্থে সব ধরনের নথি যাচাই করার পূর্ণ নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছিল কিন্তু বাস্তবে চাহিদা অনুযায়ী তথ্য মেলেনি। বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় দৈনিক “সমকাল” থেকে জানা যাচ্ছে, অন্তর্বর্তী সরকার জাতিসংঘকে আংশিক তথ্য দিয়েছিল। 

এই বিষয়টার জন্য জাতিসংঘের উচ্চ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ দৈনিক সংবাদসংস্থা “সমকালকে” জানিয়েছে, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই-আগস্টে ছাত্র জনতার উপর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তদন্তের জন্য তাদের আমন্ত্রণ জানায়। বিষয়টি সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার বলা হলেও অপরাধ এবং অনেক অপরাধীর তথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের তরফ থেকে অপারগতা দেখা যাচ্ছে, যা মোটেই কাম্য নয়। 

এরপরেই শোনা যাচ্ছে, অন্তর্বর্তী সরকার তড়িঘড়ি গত বছরের ডিসেম্বর এবং এই বছরের জানুয়ারি মাসে কিছু তথ্য জাতিসংঘকে পাঠায়। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা দাবি করছেন, “অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই-আগস্ট সংক্রান্ত তথ্যগুলিকে ম্যানুপুলেট করে জাতিসংঘকে পাঠিয়েছে, সেজন্যই তারা এতটা সময় নিয়েছে। এক্ষেত্রে জাতিসংঘের তদন্তকমিটির তরফ থেকে স্বাধীনভাবে সংগ্রহ করা তথ্য-উপাত্তোর সাথে ইউনুস সরকার পেরিত তথ্য উপাত্তের পার্থক্য থাকা স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে জাতিসংঘ বিষয়টার দিকে নজর রাখবে বলে বিশ্লেষক মহলের আশা।”

ইতিমধ্যেই “সমকাল” সংবাদসংস্থাকে দেওয়া জাতিসংঘের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাক্ষাতের বিষয়টি তুলে ধরে বলা হচ্ছে, জাতিসংঘের আধিকারিকেরা নিজেরাই জুলাই-আগস্ট ঘটনার তদন্তে ইউনুস সরকারের অসহযোগিতার প্রতি ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। সেক্ষেত্রে জাতিসংঘের অনুসন্ধানী দল নিজেরাই জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা বাহিনীর নেতৃত্বের সঙ্গে দেখা করার একাধিক অনুরোধ অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অগ্রাহ্য করেছিল। একাধিক অনুরোধের পরেও নিরাপত্তা বা গোয়েন্দা বাহিনীর নেতৃত্বের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি মেলেনি। ফলত, অন্তর্বর্তী সরকার জাতিসংঘকে স্বাধীনভাবে তথ্য অনুসন্ধানের বা তথ্য সংগ্রহের পরিবেশ দেয়নি, তা বোঝাই যাচ্ছে। ‌

ইতিমধ্যেই সুইজারল্যান্ডের ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের এক সাক্ষাৎকারে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মোঃ ইউনুসকে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বর্তমান হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক জানিয়েছেন, এই মাসেই অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি মাসেই জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের চূড়ান্ত পর্যায়ের প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। তবে বর্তমানে সেই আসন্ন প্রতিবেদন নিয়েও প্রশ্ন তুলছে বিশ্বের বড় বড় সংস্থা ও বিশ্লেষকরা। 

এক্ষেত্রে যেখানে জাতিসংঘের তদন্ত দল কিছুদিন আগে নিজেরাই ইউনুস সরকারের অসহযোগিতার তথ্যটি সমকাল সংবাদসংস্থাকে জানিয়েছিল, সেক্ষেত্রে ইউনুস সরকার পেরিত তথ্য-উপাত্তের মধ্যে গরমিল থাকবে, এই অভিযোগটা একেবারেই অসঙ্গতিপূর্ণ নয়। ইতিমধ্যেই বিশ্বের বড় বড় গোয়েন্দা সংস্থা বিষয়টির উপর নজর রাখছে এবং একইসাথে তাদের নজরের আওতায় থাকবে জাতিসংঘের আসন্ন রিপোর্টটিও। 


 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ